দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা উচিত জানা জরুরি
কালোজিরা খাওয়ার দারুণ ১৫টি উপকারিতা ও ৫টি অপকারিতাআজকের আর্টিকেলে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা উচিত এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।প্রতিদিন কত গ্লাস পানি পান করলে আপনার শরীরের জন্য উপকারী হবে এবং শরীর সুস্থ থাকবে সেটাই আজকের আর্টিকেলে আপনি জানতে পারবেন।
পানি আমাদের দেহের জন্য অত্যাবশ্যক, সেটা আপনি হয়তো জানেন। কিন্তু দৈনিক কি পরিমান পানি পান করলে শরীর রোগহীন ও সুস্থ থাকতে পারে, সে সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। আমরা আলোচনা করব দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা উচিত। সেই সাথে পানি পান করার সঠিক নিয়ম, কোন ধরনের পানি পান করা উচিত বা উচিত না, পানি পান করার সতর্কতা গুলো কি ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি আজকের পোস্টে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ আপনার দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা উচিত জানুন আর একটি স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করুন।
- দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা উচিত।
- দৈনিক পরিমাণমতো পানি পান করবেন কেন ?
- দৈনিক পানি পান করার সঠিক নিয়ম।
- দৈনিক কোন ধরণের পানি পান করা উচিত।
- যেসব পানি পান করা উচিত না।
- অতিরিক্ত পানি খেলে কি হয় ?
- বৃষ্টির পানি খেলে কি হয় ?
- কম পানি খেলে কি হয় ?
- পানি পান করার সময় যেসব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
- লেখকের শেষ বক্তব্য।
দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা উচিত
দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা উচিত তা আসলে আপনার বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক কার্যকলাপের মাত্রা এবং আপনি যেখানে বাস করেন সেখানকার জলবায়ু ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। শরীর সুস্থ সবল ও সুন্দর রাখতে প্রতিদিন কি পরিমান পানি পান করা উচিত সেটা সকলেরই জানতে হবে।
আপনাদের সঠিক তথ্য প্রদানের প্রচেষ্টায় নিচে এই ব্যাপারে বিস্তর আলোচনা করলাম-
- সাধারণ পানি পানের পরিমাণঃ সাধারণভাবে বলা যায় একজন মানুষের ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত যা ২ লিটারের কাছাকাছি। এটি সাধারণভাবে অনুমান করা হয় তাই এটি সবার জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে।
- প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের পানি পানের পরিমাণঃ প্রাপ্তবয়স্ক একজন পুরুষ মানুষের দৈনিক ১০ থেকে ১২ গ্লাস অর্থাৎ প্রায় ৩লিটার পানি পান করা উচিত।
- প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার পানি পানের পরিমাণঃ একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার দৈনিক ৮-১০ গ্লাস অর্থাৎ প্রায় ২.২ লিটার পানি পান করা উচিত।
কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে শরীরে পানির চাহিদা বাড়েঃ যেমন-
- শারীরিক কার্যকলাপঃ আপনি যদি বেশি ব্যায়াম করেন বা পরিশ্রমের কাজ করেন তাহলে আপনার শরীর বেশি ঘামবে এবং সেই কারণে বেশি পানির প্রয়োজন হবে।
- উষ্ণ আবহাওয়াঃ গরম আবহাওয়ায় আপনার শরীর বেশি ঘামবে তাই ডিহাইড্রেশন এড়াতে বেশি পরিমাণ পানি পান করা উচিত।
- অসুস্থতাঃ জ্বর, বমি বা ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে অধিক পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়, এতে আপনার শরীর পানিশুন্য হয়ে যেতে পারে। তাই এঅবস্থায় আপনার বেশি বেশি পানি পান করা উচিত।
- গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালেঃ গর্ভবতী স্তন্যদানকারী মহিলাদের সাধারণ মানুষের চেয়ে অধিক পরিমাণে পানি পান করা উচিত।
দৈনিক পরিমাণমতো পানি পান করবেন কেন
দৈনিক পরিবর্তন পানি পান করে আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য। বলা হয়ে থাকে, পানির অপর নাম জীবন। পানি পান না করে কোন জীবের বেঁচে থাকা সম্ভব হবে না। কিন্তু অবশ্যই পানি পানের নির্দিষ্ট পরিমাণ আছে। পরিমাণ মতো পানি পান করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেই বিষয়ে এখন আমরা নিচে আলোচনা করবো।
- শরীরের অঙ্গ প্রতঙ্গ সচল রাখাঃ আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ যেমন- কিডনি, হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন। পানি আমাদের শরীরের কোষ টিস্যু এবং অঙ্গকে সিক্ত রাখে।
- শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণঃ ঘামের মাধ্যমে আমাদের শরীর অতিরিক্ত তাপ বের করে দেয় এবং এবং শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।
- হজমক্ষমতা বৃদ্ধিঃ পানি আমাদের খাবার হজম করতে এবং পুষ্টি উপাদান শোষণ করতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- শরীরে দূষিত পদার্থ অপসারণঃ প্রস্রাবের মাধ্যমে পানি শরীর থেকে বর্জ্য ও ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে আমাদের কিডনি ভালো থাকে।
- ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষাঃ পানি ত্বককে মশ্চারাইজ করে ত্বকের আর্দ্রতা বজায়, যা আমাদের ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করলে আমাদের তো ডিহাইড্রেট হয়ে যায়, যা ত্বকের রুক্ষতা ও অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
- শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিঃ পযাপ্ত পরিমাণ পান করলে শরীর সতেজ থাকে এবং আপনার শরীরে ক্লান্তি কম অনুভুত হবে। বিশেষ করে ব্যায়ামের এবং অন্যান্য শারীরিক পরিশ্রমের কিছুক্ষণ পর পানি পান করা জরুরি।
- মাথা ব্যাথা প্রতিরোধঃ ডিহাইড্রেটেশনের কারণে অনেক সময় আপনার মাথা ব্যাথা হতে পারে। পরিমাণ মতো পানি পান করলে সমস্যা এড়ানো যায়।
সুতরাং, চেষ্টা পরিমাণে পানি পান করার আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এবং সুস্থ জীবনযাত্রার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের শরীরের প্রতিটি প্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।
দৈনিক পানি পান করার সঠিক নিয়ম
দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করা উচিত। এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে পানি পান করলে আপনার শরীর হাইড্রেট থাকবে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে সহায়তা করবে। আসুন তাহলে দৈনিক পানি পান করার সঠিক নিয়ম জেনে নিন।
- ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পানি পানঃ সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে ১গ্লাস হালকা কুসুম গরম অথবা সাধারণ তাপমাত্রার পানি পান করুন। এটি আপনার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সতেজ করে, হজম প্রক্রিয়া শুরু করতে সাহায্য করে এবং রাতে শরীরে জমা হওয়া টক্সিন শরীর থেকে বের করে দিতে সহায়তা করে।
- খাবারের আগে পানি পানঃ প্রতিটি প্রধান খাবারের (সকাল দুপুর রাত) অন্তত ৩০ মিনিট আগে এক গ্লাস পানি পান করুন। এটি আপনার খাবার সহজে হজম করতে সাহায্য করবে এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়া কমাতে সহয়তা করবে।
- খাবার খাওয়ার সময় অতিরিক্ত পানি পান পরিহারঃ খাবার খাওয়ার সময় পানি পান করা উচিত নয়। এটি আপনার হজম রসকে পাতলা করে ফেলতে পারে যার ফলে খাবার হজম প্রক্রিয়া ধীর হতে পারে। প্রয়োজনে অল্প পরিমাণে পানি পান করুন, তবে ১ গ্লাস নয়। খাবার খাওয়ার অন্তত ৩০মিনিট পর পানি পান করা উচিত।
- সারাদিনে অল্প অল্প করে পানি পানঃ ১সাথে বেশি পানি না খেয়ে সারাদিনে অল্প অল্প করে কিছুক্ষণ পর পর পানি পান করা উচিত। এক থেকে দেড় ঘন্টা পর পর ১গ্লাস করে পানি পান করার অভ্যাস তৈরি করুন।
- তৃষ্ণা পেলে অপেক্ষা না করাঃ তৃষ্ণা পেলে দেরি না করে সাথে সাথে পানি পান করুন। তৃষ্ণা হলো আপনার শরীরের পানির অভাবের সংকেত।
- ব্যায়ামের আগে, চলাকালীন ও পরে পানি পানঃ ব্যায়াম শুরু করার ১-২ঘন্টা আগেই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। ব্যায়াম শুরু করার পর অল্প অল্প করে পানি করুন যাতে আপনার শরীর ডিহাইড্রেট না হয়। ব্যায়াম শেষ করার পর ঘামের মাধ্যমে বেরিয়ে যাওয়া পানির ঘাটতি পূরণ করতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
- পরিবেশ ও শারীরিক কার্যকলাপ অনুযায়ী পরিমাণ নির্ধারণঃ গরম আবহাওয়া ও বেশি শারীরিক পরিশ্রমের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি পান করা উচিত।
- রাতে ঘুমানোর আগে অতিরিক্ত পানি পরিহারঃ রাতে ঘুমানোর আগে বেশি পরিমাণ পানি পান করলে ঘন ঘন প্রসাবের বেগ আসতে পারে। যার ফলে আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই রাতে ঘুমানোর ১-২ঘন্টা আগে পানি পান করুন।
- নিজের শরীরের লক্ষণ পর্যবেক্ষণঃ আপনার প্রসাবের রং হওয়া উচিত হালকা হলুদ বা প্রায় বর্ণহীন। প্রসাবের রং গাঢ় হলুদ হলো শরীরে পানির অভাবের লক্ষণ। তাই এদিকে খেয়াল রাখুন।
অতএব, এই নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি আপনার শরীরে পানির সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবেন এবং সুস্থ থাকতে পারবেন। তবে বিশেষ কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার শরীরের জন্য পানির পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত।
দৈনিক কোন ধরণের পানি পান করা উচিত
দৈনিক পান করার জন্য সবচেয়ে ভালো ও স্বাস্থ্যকর পানি হলো সাধারণ বিশুদ্ধ পানি। আর এর কোনো বিকল্প নেই। এটি আপনার শরীরের হাইড্রেশন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। আসুন এই ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিন।
- সাধারণ পরিষ্কার পানিঃ সাধারণ পরিস্কার বিশুদ্ধ পানি পান করার জন্য সর্বোত্তম। এটিতে কোন ক্যালোরি চিনি বা কৃত্রিম উপাদান নেই। এটি আপনার শরীরকে বিশুদ্ধভাবে হাইড্রেট করে। । কলের পানি যদি পরিষ্কার এবং নিরাপদ হয়, তবে তা পান করা যেতে পারে। কিন্তু অনেক স্থানে ফলে জীবাণু বা অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান থাকতে পারে, সে ক্ষেত্রে ফুটিয়ে বা ফিল্টার করে পান করা উচিত। পানীয় একটি বিকল্প পথ হিসেবে নেয়া যেতে পারে। তবে এর পরিবেশগত প্রভাব এবং খরচ বিবেচনা করা উচিত।
- ফিল্টার করা পানিঃ কলের পানি বা বোতলজাত পানিকে ফিল্টার করার করার মাধ্যমে ক্লোরিন, বাড়ি ধাতু এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান দূর করা যায়, যার ফলে এর স্বাদ ও গুণগত মান উন্নত হয়। বিভিন্ন ধরনের ওয়াটার ফিল্টার যেমন-একটিভেটেড কার্বন ফিল্টার, রিভার্স অসমোসিস ফিল্টার ইত্যাদি বাজারে পেয়ে যাবেন।
- ফুটানো পানিঃ যদি পান করার পানির উৎস নিয়ে থাকে, তাহলে পানি ফুটিয়ে পান করা সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। পানিকে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিলে তা জীবাণু মুক্ত হয়ে যাবে। তারপর সেই পানি আপনি ঠান্ডা করে পার করতে পারেন।
সুতরাং, দৈনিক পান করার জন্য সাধারণ বিশুদ্ধ পানি সবচেয়ে ভালো। সারাদিনে নিয়ম করে এ বিশুদ্ধ পানি পান করলে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে।
যেসব পানি পান করা উচিত না
যেসব পানি পান করলে আপনার শরীর অসুস্থ হয়ে পড়বে এবং পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিবে সেসব পানি অবশ্যই পান করা উচিত না। চলুন তাহলে জেনে নিন কোন ধরনের পানি পান করা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
- নদী, পুকুর, খাল, বিল, ডোবা ইত্যাদির সরাসরি পানি পান করা মোটেও উচিত নয়। কারণ এই পানিতে অনেক ধরনের রোগ জীবাণু ও ধুলাবালি বা ময়না থাকতে পারে। যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
- যেসব কলের পানিতে আর্সেনিক বা অন্য কোন ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া রয়েছে সেসব পানি পান করা অবশ্যই উচিত নয়। এজন্য আপনাকে যে কলের পানি খেতে চাচ্ছেন সেই কলের পানি ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেয়া উচিত।
- ময়লাযুক্ত পাত্রের পানি আপনি কখনোই পান করবেন না। পানি পান করার আগে অবশ্যই এটা খেয়াল রাখবেন যে পাত্রের পানি পান করতে যাচ্ছেন সেটা পরিষ্কার কিনা। কারণ ময়লাযুক্ত পাত্রে রাখা পানির সাথে ময়লা ও রোগ জীবাণু আপনার পেটে প্রবেশ করে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ যেমন ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয় ইত্যাদি সৃষ্টি করতে পারে।
অতিরিক্ত পানি খেলে কি হয়
- ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতাঃ অতিরিক্ত পানি পান রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে। সোডিয়াম শরীরের গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রোলাইট, যা স্নায়ু এবং পেশি ফাংশনের জন্য অপরিহার্য। আর এই ইলেকট্রোলাইটের অভাবে দুর্বলতা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, বিভ্রান্তি, খিচুনি এমনকি কোমাও চলে যেতে হতে পারে।
- কোষ ফুলে যাওয়াঃ শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা কমে গেলে, কোষের বাইরের পানির ঘনত্ব কমে যায়। ফলে কোষের ভিতরে জল প্রবেশ করে এবং কোষ ফুলে যায়।
- মাথা ব্যাথাঃ অতিরিক্ত পানি পান করার কারণে মস্তিষ্কের কোষ ফুলে যাওয়ায় মাথা ব্যথা হতে পারে।
- বমি বমি ভাব ও বমিঃ শরীরে অতিরিক্ত পানি প্রবেশ করলে আপনার বমি বমি ভাব হতে পারে ও বমিও হতে পারে।
- ক্লান্তিঃ ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতার কারণে আপনার শরীর ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করতে পারে।
- বেশি দুর্বলতা বা খিচুনিঃ সোডিয়ামের অভাব পেশির ফাংশনকে প্রভাবিত করতে পারে যার ফলে আপনার শরীরে দুর্বলতা সৃষ্টি ও খিচুনি হতে পারে।
- ঘন ঘন প্রসাবঃ অতিরিক্ত পানি পান করলে স্বাভাবিকভাবে ঘনঘন প্রসাবের বেগ আসবে। তবে এটি যদি অস্বাভাবিকভাবে বেশি হয় তাহলে আপনাকে অবশ্যই অতিরিক্ত পানি পান বর্জন করতে হবে।
বৃষ্টির পানি খেলে কি হয়
- বায়ুমণ্ডলীয় দূষণঃ বৃষ্টির পানি ভূপৃষ্ঠে পড়ার আগে বাতাসের বিভিন্ন দূষিত কণার সংস্পর্শে আসে। এরমধ্যে ধোয়া, রাসায়নিক পদার্থ, ধূলিকণা এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান মিশ্রিত থাকতে পারে। এই দূষিত প্রাণী পান করলে শ্বাসকষ্ট , এলার্জির মতো সমস্যা হতে পারে।
- জীবাণুর উপস্থিতিঃ বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করার পাত্র এবং ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন ক্ষতিকর জীবাণু যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং পরজীবী থাকতে পারে। বৃষ্টির পানি এসবের সংস্পর্শে এলে দূষিত হওয়া সম্ভব না থাকে। এই জীবাণু যুক্ত পানি পান করলে পেটের রোগ, ডায়রিয়া বমি বা অন্যান্য সংক্রমণ হতে পারে।
- রাসায়নিক দূষণঃ শিল্পাঞ্চল বা কৃষিজমীর কাছাকাছি এলাকায় এসিড বৃষ্টি হওয়া সম্ভাবনা থাকে। অ্যাসিড বৃষ্টিতে সালফিউরিক অ্যাসিড এবং নাইট্রিক এসিডের মত ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এই পানি পান করলে পরিপাকতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
- ছাদের দূষণঃ বৃষ্টির পানি সাধারণত ছাদ থেকে সংগ্রহ করা হয়। ছাদের উপরিভাগের পাখির মল, ধুলাবালি। এবং অন্যান্য আবর্জনা লেগে থাকতে পারে প্রথম কয়েক মিনিটের বৃষ্টিতে দূষিত পদার্থগুলো পানির সাথে মিশে যায়। তাই প্রথম বৃষ্টির পানি পান করা উচিত নয়।
- সংগ্রহের পদ্ধতিঃ বৃষ্টির পানি সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে তাতে মশা ডিম পাড়তে পারে এবং অন্যান্য রোগ জীবাণুর বংশবৃদ্ধি হতে পারে। পাত্রের পানি রাখলে তা পান করার অযোগ্য হয়ে পড়ে।
কম পানি খেলে কি হয়
- ডিহাইড্রশনঃ পানি কম খেলে শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়, যা কোষ ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক কার্যকারিতা কে ব্যাহত করে।
- ক্লান্তি ও দুর্বলতাঃ পর্যাপ্ত পানি ছাড়া শরীর শক্তি উৎপাদন করতে পারেনা ফলে আপনার শরীর ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করে।
- মাথা ব্যাথা ও মাথা ঘোরাঃ ডিহাইড্রেশনের কারণে আপনার শরীরে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে যেতে পারে, যার ফলে মাথা ব্যাথা ও মাথা ঘোরা দেখা দেয়।
- কোষ্ঠকাঠিন্যঃ পানি হজম প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কম পানি পান করলে হজমে সমস্যা হয় যার ফলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
- ত্বকের সমস্যাঃ পানি কম খেলে আপনার ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং ত্বকের ইলাস্টিসিটি কমে যায়।
- কিডনির সমস্যাঃ পর্যাপ্ত পানি কিডনিকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। কম পানি পান করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে এবং অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে।
- মুত্রাশয়ের সংক্রমণঃ পর্যাপ্ত পানি পান না করলে মুত্রাশয়ে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমের ঝুঁকি বাড়ে।
- শারীরিক কার্যকারিতা হ্রাসঃ ব্যায়াম বা অন্য কোনো শারীরিক কার্যকলাপের সময় শরীর দ্রুত ডিহাইডেট হতে পারে, যা আপনার শরীরের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
- হজম সমস্যাঃ পানি হজম তন্ত্রকে সচল রাখতে সাহায্য করে। কম পানি পান করলে হজমে সমস্যা হতে পারে।
- শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যাঃ পানি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডিহাইড্রেশন হলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
পানি পান করার সময় যেসব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত
- ধীরে ধীরে পান করাঃ তাড়াহুড়ো করে বা খুব দ্রুত পানি পান করা উচিত নয়। এতে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে এবং পেট ফাঁপা বা অস্বস্তির সৃষ্টি হতে পারে। ছোট ছোট চুমুকে ধীরে ধীরে পানি পান করা শ্রেয়।
- খাবার গ্রহণের পর পরই অতিরিক্ত পানি নয়ঃ খাবার হজমের জন্য পাকস্থলীতে এসিডের প্রয়োজন হয়। খাবার পর পরই অতিরিক্ত পানি পান করলে সেই এসিড পাতলা হয়ে যেতে পারে, যা হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয় এবং বদহজমের কারণ হতে পারে। খাবার গ্রহণের অন্তত ত্রিশ মিনিট পর পানি পান করা উচিত।
- দাঁড়িয়ে পানি পান করা পরিহার করুনঃ দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তার দ্রুতগতিতে খাদ্যনালী দিয়ে সরাসরি কিডনিতে চলে যায়, যা কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যা হতে পারে। সর্বদা বসে পানি পান করা উচিত।
- অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি এড়িয়ে চলুনঃ বিশেষ করে খাবার পর বা শরীর চর্চার পর অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করা উচিত নয়। এটি হজমতন্ত্র সংকুচিত করতে পারে এবং পুষ্টিগুণ শোষণে বাধা দিতে পারে। হালকা উষ্ণ বা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় পানি পান করাই ভালো।
- পরিশ্রুত পানি পান নিশ্চিত করুনঃ অপরিষ্কার বা দূষিত পানি পান করলে ডায়রিয়া কলেরা টাইফয়েডের মত পানিবাহিত রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই সর্বদা বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি পান করা উচিত। প্রয়োজনে পানি ফুটিয়ে বা ফিল্টার করে পান করুন।
- অতিরিক্ত পানি পান থেকেও সাবধানঃ যদিও পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরী, তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি পান করা ক্ষতিকর হতে পারে। এটি শরীরের সোডিয়ামের মাত্রা কমে দিতে পারে, যা মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব এবং অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তৃষ্ণা পেলে পানি পান করুন, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে নয়।
- শারীরিক কার্যকলাপ এর আগে ও পরে পানি পানঃ শরীরচর্চা বা অন্য কোন শারীরিক কার্যকলাপের আগে এবং পরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা জরুরী। ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা পায় এবং কর্মকর্তা বজায় থাকে।
ট্রাসটেডএয়ার্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url